বর্তমান ডিজিটাল যুগের মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট। তাই
সকলের সাইবার অপরাধের কারণগুলো কি জেনে রাখা প্রয়োজন। আমরা সকলেই ইন্টারনেট
ব্যবহার করি কিন্তু আমরা জানিনা সাইবার অপরাধের কারণগুলো কি। ইন্টারনেট যদিও
আমাদের অনেক সুযোগ সুবিধা নিয়ে এসেছে কিন্তু এর অন্ধকার দিক ও অনেক গভীর।
ইন্টারনেট যেমন মানুষের কাছে সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে তেমনি সাইবার অপরাধের
জন্ম দিয়েছে।
সূচিপত্রঃ- সাইবার অপরাধের কারণ
ভুমিকা
সাইবার অপরাধের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের সকলেই প্রভাবিত হয়ে থাকে। এবং সকলেই হুমকির মুখে সম্মুখীন।
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন এবং রূপ রয়েছে। সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি
সেগুলো অন্বেষণ করার জন্য সাইবার নিরাপত্তা কৌশল পর্যালোচনা করা উচিত।
সাইবার অপরাধ কি
সাইবার অপরাধ হলো কম্পিউটার ডিভাইসকে ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করা। অথবা অন্য
কারো ডিভাইসের অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করা। সাইবার অপরাধে সাধারণত
কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজনীয়তা
ব্যাপক। ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজনীয়তা বাড়ার পাশাপাশি সাইবার অপরাধের
পরিমাণ এবং এর গতিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ধরনের অপরাধ করতে অপরাধীকে সশরীরে বা মুখোমুখি হতে হয় না। সাইবার অপরাধগুলোর
মধ্যে রয়েছে, হ্যাকিং, ফিশিং, স্প্যামিং, কারো বিরুদ্ধে অপ্রতিকর এবং মিথ্যা
তথ্য প্রচার, কারো ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে আপলোড করা,
নিজের পরিচয় গোপন করে ধর্মীয় উস্কানিমূলক কথা ছড়ানো ইত্যাদি।
সাইবার অপরাধের কারণ
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এবং ফাইবার অপরাধগুলো বেশকিছু কারণে সংঘটিত
হয়ে থাকে। সাইবার অপরাধের কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার লাভঃ
ফাইবার অপরাধের কারণগুলো কি সেগুলোর মধ্যে কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত
বিস্তার লাভ অন্যতম। বর্তমানে খুব দ্রুত কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সংযোগ
বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে অপরাধীদের অপরাধ করার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরাধীর প্রযুক্তির বিষয়ে দক্ষতাঃ
যারা সাইবার অপরাধ করে থাকেন তারা অবশ্যই প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে দক্ষ।
সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি সেগুলোর মধ্যে বিশেষ দক্ষতা অন্যতম কারণ। দক্ষতা
সম্পন্ন মানুষগুলো ভালো কাজে তাদের দক্ষতা প্রয়োগ না করে অপরাধমূলক কাজে
প্রয়োগ করে থাকে।
আইনগত ব্যবস্থার জটিলতাঃ
সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি সেগুলোর মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জটিলতা
অন্যতম কারণ হতে পারে। অপরাধীদের যত প্রযুক্ত শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ
আইনের প্রয়োগ নেই। সে ক্ষেত্রে অপরাধীদের ভেতর থেকে শাস্তি পাওয়ার ভয় থাকে
না। তাই তারা খুব সহজেই এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আইনের
জটিলতার কারণে আইনের ফাঁক দিয়ে তারা বেরিয়ে যায়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির
জন্য আইনগত ব্যবস্থার জটিলতা সাইবার অপরাধের কারণগুলো মধ্যে একটি।
গতানুগতিক পদ্ধতিতে অপরাধের সুযোগ কমঃ
গতানুগতিক পদ্ধতিতে অপরাধের ক্ষেত্র এবং সুযোগ কম থাকায় এ ধরনের অপরাধীরা
সাইবার অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাইবার অপরাধে তাদের ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক
কম। সম্ভবত এই সাহস থেকে তারা সাইবার অপরাধ বেশি পরিমাণে করে থাকে। সাইবার
অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের ধরার জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া অনেক
কষ্টকর।
অপরাধের নতুন কৌশল উদ্ভাবনঃ
সত্যি কথা বলতে নিরাপত্তা কৌশলের থেকে অপরাধীদের অপরাধ করার কৌশল উন্নত এবং
আধুনিক। সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে। সাইবার
অপরাধের কারণগুলোর মধ্যে অপরাধীদের নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনের ক্ষমতা অন্যতম। এ
ধরনের সাইবার অপরাধ ব্যক্তি, দেশ এবং সমাজ সকলের জন্যই ভয়াবহ।
সহজ অ্যাক্সেস সিস্টেমঃ
কোন সিস্টেমের সহজ এক্সেস সাইবার অপরাধের কারণ গুলোর মধ্যে একটি। আপনার
সিস্টেমের অ্যাক্সেসটি তুলনামূলক সহজ হলে খুব সহজেই অপরাধীরা আপনার সিস্টেমে
প্রবেশ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনার ডিভাইসের সিস্টেমগুলো প্রযুক্তিগত দিক
দিয়ে শক্তিশালী করুন। সাইবার অপরাধের শিকার হবেন তখনই যখন আপনার নিরাপত্তা
ব্যবস্থা দুর্বল হবে এবং হ্যাকাররা খুব সহজে আপনার সিস্টেমের অ্যাক্সেস পেয়ে
যাবে।
আরো পড়ুনঃ সাইবার নিরাপত্তা নীতিমালা ২০২৩
হ্যাকাররা সাধারণত এতটাই দক্ষ হয়ে থাকে যে আপনার অ্যাক্সেস কোড, রেটিনার ছবি,
ভয়েস রিকগনিশন ইত্যাদি ভঙ্গ করে আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের এক্সেস নিয়ে নিতে
পারে। তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে সুকৌশলে আপনার বায়োমেট্রিক সিস্টেমকে বোকা
বানিয়ে সিস্টেমের ফায়ারওয়ালের মধ্যে দিয়েও আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।
সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি সেগুলোর মধ্যে সহজ এক্সেস সিস্টেম অন্যতম।
একটি ছোট জায়গায় ডেটা সংরক্ষণ করাঃ
সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ডাটা গুলো একটি কম্পিউটারের ছোট্ট একটা জায়গায়
প্রচুর পরিমাণে কম্প্যাক্ট হিসেবে সংরক্ষিত রাখা হয়। এই ছোট্ট জায়গায়
অনেকগুলো তথ্য কমপ্যাক্ট অবস্থায় রাখা সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি সেগুলোর
মধ্যে অনেক বড় কারণ। কম্পিউটারের আবিষ্কারের পর থেকেই সাইবার অপরাধের সূচনা
হয়। ডাটাগুলো একটি ছোট্ট জায়গায় সংরক্ষিত থাকার ফলে হ্যাকারদের পক্ষে
তথ্যগুলো হ্যাক করা বা চুরি করা সহজ হয়। তাই আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা
ফাইলগুলো এক জায়গায় না রেখে আলাদা আলাদা জায়গায় রাখতে পারেন। ছোট্ট একটি
স্পেসে প্রচুর তথ্য রাখা সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি তাদের মধ্যে একটি।
জটিল কোডিংঃ
সাইবার অপরাধের কারণ গুলো কি সেই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো
জটিল কোডিং ব্যবস্থা। কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে লক্ষ লক্ষ কোড দিয়ে
তৈরি করা হয়। এবং এগুলো একজন সাধারন মানুষের দ্বারাই করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
যার ফলে অনেক সময় কোর্ট তৈরি করার সময় ছোটখাটো ভুল বা ফাক থেকে যেতে পারে। আর
এই ধরনের ছোটখাট ভুলকেই হ্যাকাররা কাজে লাগিয়ে থাকে। অপরাধীরা এরকম ছোটখাটো
গ্যাপ বা লুপ দিয়েই অন্যের সিস্টেমে খুব সহজে ঢুকে হ্যাক করতে পারে।
অবহেলাঃ
সাইবার অপরাধের কারণ গুলোর মধ্যে আপনার অবহেলা অন্যতম কারণ হতে পারে। আপনার
অবহেলার কারণে আপনি যেকোনো সময় সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারেন। আপনি যদি
আপনার সিস্টেমের নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলায় থাকেন তাহলে আপনার এই অবহেলা আপনার
বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। আপনার সামান্য এই অবহেলা সাইবার অপরাধীদের অপরাধ
করার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। তাই আপনি আপনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং
সতর্ক থাকুন।
প্রমাণের ক্ষতিঃ
গতানুগতিক অপরাধ গুলোর ক্ষেত্রে অপরাধীরা তাদের অজান্তেই কিছু না কিছু প্রমাণ
রেখে যায়। কিন্তু সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীরা তাদের সমস্ত প্রমাণপত্র
ধ্বংস করতে সক্ষম। তাদের প্রমাণপত্র বা কোন চিহ্ন ধ্বংস করার ক্ষমতা সাইবার
অপরাধীদের অপরাধ করাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। যাতে করে সাইবার তদন্তের সময়
তাদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব না হয়। অপরাধীর প্রমাণ হারানো সাইবার অপরাধের অন্যতম
এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
আর্থিক লাভঃ
সাইবার অপরাধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। সাইবার
অপরাধের মাধ্যমে খুব সহজে অর্থ আদায় করা সম্ভব। সাইবার অপরাধীরা সাধারণত
ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে, জালিয়াতির মাধ্যমে এমনকি হ্যান্ডসাম ওয়্যার
আক্রমণের মাধ্যমে অর্থ দাবি করতে পারে। সাইবার অপরাধের কারণগুলোর মধ্যে
আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রেষণা এবং প্রেরণা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
রোমাঞ্চ-সন্ধানঃ
কিছু কিছু হ্যাকারদের জন্য নিরাপত্তা লঙ্ঘন করা একটি উত্তেজনামূলক এবং
চ্যালেঞ্জিং কাজ মনে করে। অনেক হ্যাকাররা নিরাপত্তা বা নিরাপত্তা সংস্থার চাইতে
এক ধাপ এগিয়ে থাকার জন্য তারা এই ধরনের সাইবার অপরাধ করে থাকে। নিরাপত্তা
ব্যবস্থা চাইতে একধাপ এগিয়ে থাকার প্রেরণা এ ধরনের অপরাধীদেরকে সাইবার অপরাধ
করতে অনুপ্রাণিত করে। এ ধরনের সাইবার অপরাধীরা মূলত রোমান্সের জন্যই এই ধরনের
অপরাধ করে এর বাইরে কোন লক্ষ্য থাকে না।
প্রতিশোধঃ
সাইবার অপরাধের কারণগুলোর মধ্যে প্রতিশোধ অন্যতম। অনেক অপরাধী প্রতিশোধ নেয়ার
জন্য বা প্রতিহিংসা মূলক এ ধরনের অপরাধ করে থাকে।
বর্তমানে লক্ষনীয় সাইবার অপরাধ
(১) ইন্টারনেটে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা।
(২) সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপরীত লিঙ্গের নামে একাউন্ট খুলে ব্যবহার করা।
(৩) মনোরঞ্জনের জন্য পর্নোগ্রাফি দেখা বা ডাউনলোড করা কিংবা পর্নোগ্রাফি
ভিডিও করে সেগুলো আপলোড করা।
(৪) অনলাইনে গেম লিংক বা জুয়া খেলা নেশা বা অর্থের উদ্দেশ্যে সেটিও
সাইবার অপরাধ।
(৫) ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার ভাইরাস বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার দিয়ে
কম্পিউটারের ক্ষতি করা।
(৬) অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা জব অফার করা
সাইবার অপরাধ।
(৭) সফটওয়্যার ও বইয়ের পাইরেসি করা ইত্যাদি।
উপসংহার
সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঝুঁকি থাকে না। এজন্য
তারা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে অপরাধীদেরকে খুঁজে বের
করা অনেক কঠিন। কিন্তু সাইবার অপরাধের কারণগুলো জানা থাকলে আমরা সাইবার
অপরাধীদের শিকার থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে
অপরাধীদের কৌশল উন্নতি হচ্ছে।