কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ডাটা বা উপাত্ত সংরক্ষণ,
প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনরুদ্ধার (Retrieve) করে থাকে। এটা চিন্তা করতে বা
যুক্তিতর্ক করতে পারে না। এটা কেবল একে দেয়া নির্দেশ পালন করতে পারে। বিভিন্ন
ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন প্রকার প্রোগ্রাম (Program) ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন প্রোগ্রাম গ্রহণ, সংরক্ষণ এবং বাস্তবায়ন বা কার্যকরী করার ক্ষমতা
কম্পিউটারকে একটি অমূল্য এবং সর্ব কাজের উপযোগী ব্যবসায়িক যন্ত্রে পরিণত করেছে।
সূচিপত্রঃ-কম্পিউটার সিস্টেম কি-কম্পিউটার সিস্টেম এর পরিচিতি
কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো সমস্যা সমাধান করার ১ম ধাপ হলো একটি কম্পিউটার
প্রোগ্রাম তৈরি করা এবং সেটি কম্পিউটারের মেমোরীতে বা স্মৃতিতে সংরক্ষণ করা। তখন
কম্পিউটারটি সেই প্রোগ্রামে আদ্দিষ্ট নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারে ।
নির্দেশনাসমূহ সাধারণত কম্পিউটারটিকে তিনটি মৌলিক কাজ বারবার করার জন্য বলে থাকে।
সে কাজগুলো হলো ইনপুট, প্রসেসিং এবং আউটপুট। সমষ্টিগতভাবে এই তিনটি কাজকে বলা হয়
ডাটা প্রসেসিং সাইকেল (Data Processing Cycle) ।
ইনপুটঃ ইনপুট ডিভাইস বা যন্ত্রগুলো যেসব ডাটা প্রসেসিং করতে হবে সে সমস্ত
ডাটাকে কম্পিউটারে প্রবেশ করায়।
প্রসেসিংঃ ডাটার নিয়ন্ত্রণ এবং সংরক্ষণ, সাংখ্যিক তুলনা (Numerical
Comparison) এবং গাণিতিক অপারেশনসমূহ (Arithmatic Operation) ইনপুট ডাটার উপর
প্রয়োগ করে রেজাল্ট বা ফলাফল তৈরি করে।
আউটপুটঃ কম্পিউটার প্রসেসড বা প্রক্রিয়াকৃত ডাটা বা তথ্য (Information)
কে আউটপুট ডিভাইসে প্রেরণ করে।
সুতরাং বলা যায়, কম্পিউটার একটি প্রোগ্রাম রীড (read) করে বা পড়ে এবং তা মেমোরী
বা স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে এবং সেই প্রোগ্রামে উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে
গিয়ে-
- ডিস্ক, কীবোর্ড বা অন্যান্য স্টোরেজ মিডিয়া বা সংরক্ষক মাধ্যম থেকে ডাটা ইনপুট করে বা প্রবেশ করায়।
- ডাটা প্রসেস করে বা প্রক্রিয়াজাত করে।
- স্ক্রিণ, ডিস্ক বা অন্যান্য মাধ্যমে রিজাল্ট বা ফলাফল প্ৰদৰ্শন করে বা আউটপুট করে।
কম্পিউটার সিস্টেমের উপাদানসমূহ
কম্পিউটার ডাটা প্রসেস করার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং একটি ডাটা প্রসেসিং সিস্টেম
কেবল কিছু মেশিন নয়-এর চেয়ে বেশি কিছু। একটি কম্পিউটার সিস্টেমে অবশ্যই যে সকল
উপাদান থাকবে সেগুলো হলোঃ
* হার্ডওয়্যার
* হিউম্যানওয়্যার
* সফটওয়্যার
* অপারেশনাল প্রসিডিউর বা কার্যপদ্ধতি
হার্ডওয়্যার
হার্ডওয়্যার বলতে বুঝায় মেশিন বা যন্ত্র বা স্পর্ষণীয় বা বাহ্যিক যন্ত্রসমূহ
যা ডাটা প্রসেসিং সাইকেলের মূল কাজ সম্পাদন করে। কম্পিউটার ছাড়াও অন্যান্য আরো
কিছু হার্ডওয়্যার ডিভাইস প্রয়োজন হয়ে থাকে। ঐ ডিভাইস বা যন্ত্রগুলো হতে পারে
অফলাইন (Offline) অর্থাৎ কম্পিউটার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং স্বাধীনভাবে কার্য
পরিচালনাকারী, অথবা সেগুলো হতে পারে অনলাইন (On-line) অর্থাৎ যা সরাসরি
কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত এবং কম্পিউটার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। একটি প্রিন্টার হলো
একটি অফ-লাইন ডিভাইস আর একটি কীবোর্ড হলো একটি অন-লাইন ডিভাইস ।
সফটওয়্যার
প্রোগ্রাম (Program) হলো ইনসট্রাকশন বা নির্দেশনার সমষ্টি যা কম্পিউটারকে বিশেষ
কোন কাজ সম্পাদন করতে নির্দেশ দেয়। সে জন্য কম্পিউটারের অবশ্যই সংরক্ষিত
প্রোগ্রামে এবং ইনপুট ডিভাইসে একসেস (Access) বা প্রবেশাধিকার থাকতে হবে যাতে সে
ডাটা পেতে পারে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে, গাণিতিক ভাবে ডাটাসমূহ রদবদল বা
পরিবর্তন করতে পারে এবং ফলাফলসমূহ সঠিক ধারাবাহিকতায় আউটপুট দিতে পারে।
প্রোগ্রামসমূহকে বলা হয় সফটওয়্যার। সফ্টওয়্যারসমূহকে সাধারণত নিম্নবর্ণিত
শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারেঃ
- সিস্টেম সফটওয়্যার এবং
- এপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
সিস্টেম সফ্টওয়্যার
সিস্টেম সফটওয়্যার বলতে ঐ সমস্ত প্রোগ্রামকে বুঝায় যেগুলো কম্পিউটার ব্যবহার
করতে সাহায্য করে। ঐ সমস্ত প্রোগ্রাম সাধারণত বেশ কিছু স্ট্যান্ডার্ড কাজ করে
থাকে । যেমন : ডাটা ফাইলসমূহ সংগঠিত করা এবং তাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদন করা,
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে লিখিত প্রোগ্রামসমূহ কম্পিউটারের কাছে গ্রহণযোগ্য
ল্যাঙ্গুয়েজে অনুবাদ বা রূপান্তরিত করা, কম্পিউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার কর্তৃক
সম্পাদনযোগ্য বিভিন্ন কাজের সিডিউল বা সময়সূচি নির্ধারণ করা এবং সাধারণ
কাজসমূহের অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করা ইত্যাদি। সকল সিস্টেম
সফটওয়্যারের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার হলো অপারেটিং সিস্টেম
(Operating System)।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার
এপ্লিকেশন সফটওয়্যারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে এমন সব প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারী
বা ইউজারের এপ্লিকেশন বা ব্যবহারিক কাজসমূহ সম্পাদন করে। পরীক্ষার ফলাফল তৈরির
প্রোগ্রাম এপ্লিকেশন সফটওয়্যারের একটি উদাহরণ হতে পারে। এপ্লিকেশন,
প্রোগ্রামসমূহকে কেনা হয় অথবা ব্যবহারকারী কর্তৃক বিশেষ। কাজের জন্য তৈরি করা।
হিউম্যানওয়্যার
হিউম্যানওয়্যার বলতে বুঝায় এমনসব লোকদেরকে যারা কম্পিউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন
করে। প্রোগ্রাম তৈরি করে এবং কম্পিউটার চালনা করে। এক্ষেত্রে অনেক ধরণের কাজের
ক্ষেত্র আছে। তবে তিনটি প্রধান পজিশন হলো সিস্টেম এ্যানালিস্ট, প্রোগ্রামার এবং
কম্পিউটার অপারেটর। এ সকল ক্ষেত্রে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সাধারণত একজন পরিচালক বা
ব্যবস্থাপকের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ধরণের কাজ সম্পাদন করে থাকে।
সিস্টেম এ্যানালিস্টঃ একজন সিস্টেম এ্যানালিস্টের ব্যাপক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা
এবং উপরোক্ত তিনটি শ্রেণীর কাজেরই বিশদ ধারণা থাকা প্রয়োজন হয়। সিস্টেম
এ্যানালিস্টের প্রধান কাজ হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের ইনফরমেশন সিস্টেম এবং প্রসেসিং
এর প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষা করে দেখা। একজন সিস্টেম এ্যানালিস্ট এপ্লিকেশন
সংক্রান্ত সমস্যা সংজ্ঞায়িত করে সিস্টেমের নকশা তৈরি করে, হার্ডওয়্যার এবং
সফ্টওয়্যার নির্ধারণ করে এবং ইনফরমেশন প্রসেসিং পদ্ধতি ডিজাইন করে।
প্রোগ্রামারঃ প্রোগ্রামার হতে হলে প্রয়োজন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এবং
স্ট্যান্ডার্ড কোডিং প্রসিডিউর (Standard Coding Procedure) এর ব্যাপক ও বিশদ
জ্ঞান। অবশ্য, প্রোগ্রামারের একটি এ্যাপ্লিকেশনের সামগ্রিক ধারণা এবং অন্তর্নিহিত
কাজের ধারণা থাকার প্রয়োজন নেই । প্রোগ্রামারের মূল কাজ হলো সিস্টেম
এ্যানালিস্টের স্পেসিফিকেশন বা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রোগ্রাম লেখা বা কোডভুক্ত
করা।
কম্পিউটার অপারেটরঃ তুলনামূলকভাবে, একজন কম্পিউটার অপারেটরের কম জ্ঞান বা
অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় কম্পিউটার অপারেটরগণ সাধারণত সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে
কম্পিউটার চালনা করার জন্য একসেট সুসংজ্ঞায়িত বা পূর্বনির্ধারিত কাজ সম্পাদন করে
থাকে। কম্পিউটার সিস্টেম থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া নির্ভর করে অপারেশনাল কর্মীদের
মান এবং দক্ষতার উপর।
অপারেশনাল প্রসিডিউর বা পদ্ধতি
ডাটা প্রসেসিং সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন এক সেট সুসংজ্ঞায়িত
এবং পর্যাপ্ত প্রসিডিউর বা পদ্ধতি যা কোনো কাজ পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। এই
সমস্ত কাজের মধ্যে সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে ডাটা সংগ্রহ করা এবং সেগুলো
কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশ করানো, প্রসেসিং করা, নতুন প্রোগ্রামের প্রবর্তন করা,
পুরাতন প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা ইত্যাদি। এসব পদ্ধতি পরিচালনার
ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার নষ্ট হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ
আবশ্যকীয় হয়।